১। প্রশ্নঃ চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত মামলার বিচারিক আদালত কোনটি?
উত্তরঃ দায়রা আদালত অর্থাৎ দায়রা জজ, অতিরিক্ত দায়রা জজ বা যুগ্মদায়রা জজ কর্তৃক বিচার্য। [ধারা ১৪১(গ)] ০৯-০২-২০০৬ ইং সনের সংশােধনীর পূর্বে বিচারিক আদালত ছিল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট।
২। প্রশ্নঃ N... Act এর চেক ডিসঅনার-সংক্রান্ত সংশােধনী কখন কখন হয়, উত্তর : প্রথম সংশােধনী আনা হয় ০৬-০৭-২০০০ইং তারিখে এবং সর্বশেষ সংশােধনী আনা হয় ০৯-০২-২০০৬ ইং তারিখে।
৩। প্রশ্ন : N.I. Act এর ১৩৮ ধারার মােকদ্দমা কোথায় কখন কীভাবে দায়ের করতে হবে?
উত্তর : ১৩৮ ধারা(১) মতে শর্ত পালন করার পর মামলার কারণ উৎপত্তি
হওয়ার অর্থাৎ চেক প্রদানকারী নােটিশ পাওয়ার এক(১) মাস এর মধ্যে টাকা পরিশােধে ব্যর্থ হলে চেক গ্রহীতা পরবর্তী ১ মাসের মধ্যে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট অথবা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বরাবরে লিখিত অভিযােগ দায়ের করতে পারেন।
মনে রাখতে হবে মামলার কারণ উদ্ভব হয় চেক প্রদানকারী কর্তৃক নােটিশ প্রাপ্তির ৩০ দিন পর থেকে। উক্ত সময় থেকে ১ মাসের মধ্যে লিখিত অভিযােগ দায়ের করতে হবে। বিচারের জন্য প্রস্তুত হলে ম্যাজিস্ট্রেট মামলার নথি বিচারের জন্য দায়রা জজের নিকট পাঠাবেন। দায়রা জজ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য উক্ত মামলাটি অতিরিক্ত দায়রা জজ কিংবা যুগা দায়রা জজ
আদালতে বিচারের জন্য প্রেরণ করতে পারবেন।
৪। প্রশ্ন : চেকের টাকা আদাযের জন্য দেওয়ানী আদালতে মােকদ্দমা করা।যাবে কী ?
উত্তর ঃ N... Act এর ১৩৮(৩) এর বিধান মােতাবেক অর্থদণ্ড হিসাবে
আদায়কৃত টাকা হতে চেকের গায়ে সমুদয় টাকা যদি চেকের। গ্রহীতা বা ধারককে প্রদান করা হয় তবে চেকের গ্রহীতা বা ধারক দেওয়ানী আদালতে মােকদ্দমা করতে পারবেন না। কিন্তু চেকের টাকা পরিশােধ না করা হলে বা আংশিক পরিশােধ করা। হলেও উক্ত চেকের সমুদয় বা অবশিষ্ট টাকা আদায়ের জন্য। চেকের যথানিয়মের ধারক দেওয়ানী আদালতে টাকার মােকদ্দমা করতে পারিবেন।
৫। প্রশ্ন : ১৩৮ ধারার চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত অপরাধ আপােসযােগ্য কিনা? উত্তর : মহামান্য উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তমতে বর্তমানে আপােসযােগ্য।
(14 BLC 384, 29 BLD 684)।
৬। প্রশ্নঃ অ্যাকাউন্ট ক্লোজ মন্তব্যসহ চেক ফেরত কি ?
উত্তর : অ্যাকাউন্ট ক্লোজ মন্তব্যসহ চেক ফেরত আসলেও তা ১৩৮ ধারার অপরাধ হবে। [20 BLC, 488]।
৭। প্রশ্নঃ ৬ মাসের মধ্যে চেক ব্যাংকে উপস্থাপন না করলে কী হবে?
উত্তর : N.T. Act এর ১৩৮ ধারা মােতাবেক চেক ইস্যর তারিখ হতে ৬ মাসের মধ্যে উহা ব্যাংকে উপস্থাপন করতে হবে, অন্যথায় ১৩৮ ধারা মােতাবেক চেক ডিসঅনারের অপরাধ সংঘটিত হবে না (56 DLR. 636)।
তবে চেক ইস্যুকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে চেকের যথানিয়মের ধারক ফৌজদারী ও দেওয়ানী মামলা করতে পারবে।
৮। প্রশ্ন ঃ এই চেক ডিসঅনারের মামলার স্থানীয় অধিক্ষেত্র কি?
উত্তর : সাধারণত যে ব্যাংকে চেক উপস্থাপন করা হয় সেই ব্যাংক যে
আদালতের স্থানীয় অধিক্ষেত্রে অবস্থিত সেই আদালতে (ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে) ১৩৮ ধারার মামলা দায়ের করতে হবে। তবে উচ্চ। আদালতের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত মতে উক্ত চেক সংক্রান্ত অপরাধ মােট ৫টি ক্ষেত্রের স্থানে হতে পারে, তার যে কোন একটি স্থানে ফরিয়াদি এই চেকের মামলা দায়ের করতে পারবেন এবং উক্ত ৫টি ক্ষেত্রে যে কোন স্থানে এই চেকের মামলার বিচার হতে পারবে। [59 DLR, 236] ।
৯। প্রশ্নঃ চেক ডিসঅনারের ক্ষেত্রে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় মামলা চলে কি?
উত্তর : হস্তান্তরযােগ্য N.T. Act এর ১৩৮ ধারার অপরাধ এবং দণ্ডবিধির ৪২০ ধারার অপরাধ এক নয়, একটি অপরাধ অপরটিতে থেকে পৃথক ও স্বতন্ত্র। কাজেই চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত প্রতারণার জন্য দণ্ডবিধির ৪২০ ধারার মামলা চলতে বাধা নাই। [55 DLR,200 এবং 54 DLR, 445] ।
১০। প্রশ্ন ঃ চেকের মাধ্যমে কর্জ দেওয়া হলে কত সময় এর মধ্যে দেওয়ানী
আদালতে মােকদ্দমা করতে হবে?
উত্তর ঃ তামাদি আইনের ৫৮ অনুচ্ছেদ মােতাবেক চেক ভাঙ্গার তারিখ।
হতে ৩ বৎসর এর মধ্যে উক্ত কর্জের টাকা আদায়ের জন্য টাকার মােকদ্দমা করতে হবে।।
১১। প্রশ্ন ঃ ফান্ডের অপর্যাপ্ততার কারণে চেক ডিসঅনার না হয়ে অন্য কারণে ডিসঅনার হলে ১৩৮ ধারার অপরাধ সংঘটিত হবে কিনা?
উত্তর ঃ ১৩৮ ধারায় বর্ণিত ফান্ডের অপর্যাপ্ততার কারণে চেক ডিসঅনার না হয়ে অন্য কোন কারণে ডিসঅনার হলেও তা ১৩৮ ধারার অপরাধ হবে।
১২।প্রশ্নঃ চেক একাধিকবার দাখিল করা হলেও অপরাধের জন্য কোন মামলা কতবার হবে?
উত্তর : চেকের ধারক বা প্রাপক চেকের বৈধ মেয়াদের মধ্যে যতবার খুশি
ততবার চেক ব্যাংকে উপস্থাপন করতে পারবেন এবং তার ইচ্ছানুযায়ী চেক ডিসঅনার সংক্রান্ত অত্র আইনের ১৩৮ ধারার অপরাধের জন্য মামলা দায়ের করতে পারবেন। তবে তিনি একটি চেকের ব্যাপারে ১৩৮ ধারায় একটিই মামলা করতে পারবেন। [8 BLC, 442]
১৩। প্রশ্ন ঃ NI. Act এর ১৩৮ ধারার মামলা জামিনযােগ্য কিনা?
উত্তর ঃ N.I. Act এ জামিন বিষয়ে কিছু বলা থাকলে ডিসঅনারের মামলা জামিনযােগ্য, যেহেতু এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি ১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড।
১৪। প্রশ্নঃ অভিযােগকারীর মৃত্যু হলে চেক ডিসঅনারের মামলা চলবে কিনা? উত্তর : মহামান্য উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত মতে মামলা চলাকালীন সমত
চেকের যথানিয়মের ধারক অর্থাৎ অভিযােগকারীর মত্য হলে উক্ত মামলা Abate হবে না। উক্ত অভিযােগকারীর বৈধ উত্তরাধিকারী মামলা পরিচালনা করতে পারবেন।
১৫। প্রশ্নঃ চেক গ্রহীতার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ১৩৮ ধারার মামলা
দায়ের করতে পারে কিনা?
উত্তর : মহামান্য উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত মতে চেক গ্রহীতার পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ১৩৮ ধারার মামলা দায়ের করতে পারবে। [56 DLR (AD), 17]
১৬। প্রশ্নঃ চেকের টাকার জন্য দেওয়ানী মােকদ্দমা চলমান থাকা সত্তেও
ফৌজদারী মামলা চলবে কিনা?
উত্তর : মহামান্য উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত মতে দেওয়ানী মােকদ্দমা চলমান থাকলেও ফৌজদারী মামলা স্বতন্ত্র গতিতে চলবে। [55 DLR (AD), 62]
১৭। প্রশ্ন : কেবলমাত্র চেক ডিসঅনার হলেই মামলার কারণ উদ্ভব হবে কী? উত্তর : শুধুমাত্র চেক ডিসঅনার হলেই মামলার কারণ উদ্ভব হয় না। চেক
প্রদানকারীকে নােটিশ প্রেরণের পর তা প্রাপ্তির ৩০দিনের মধ্যে চেক প্রদানকারী চেকের টাকা চেকের যথানিয়মের ধারককে প্রদান করতে ব্যর্থ হলে মামলার কারণ উদ্ভব হয়।
১৮। প্রশ্ন : কয়টি উপায়ে ১৩৮ ধারায় চেক ডিসঅনার সম্পর্কিত নােটিশ প্রদান করা যায়?
উত্তর : ৩টি উপায়ে।
১৯। প্রশ্ন : চেক ডিজঅনারের মামলায় আপীল সংক্রান্ত বিধান কি?
উত্তর ঃ এই আইনে কোথায় আপীল হবে সে সম্পর্কে কিছু বলা নাই। তাই ফৌজদারী কার্যবিধি আপীলের বিধান প্রযােজ্য হবে। অর্থাৎ যুগদায়রা জজ কর্তৃক বিচার হলে ৩০ দিনের মধ্যে দায়রা জজের। নিকট আপীল হবে। এবং অতিরিক্ত দায়রা জজ দায়রা জজ কর্তক বিচার হলে ৬০ দিনের মধ্যে হাই কোর্ট বিভাগে আপা। করতে হবে। (ধারা ১৩৮] যেহেতু কারাদণ্ড সর্বোচ্চ ১ বছর পযর্ন্ত।
#Extra_Information:
১. N.T. Act এর মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সাম্প্রতিক Reported। case [68 DLR, 228] ।
২. N.I. Act এর অধীনের মামলা থানায় দায়ের করা যায় না।
৩. N.T. Act এর মামলা থেকে উদ্ভুত কোন আইনগত বিষয়ে দায়রা জজ হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন করা যায়।।
৪. অর্থদন্ড হিসেবে আদায়কত অর্থ থেকে চেকে উল্লেখিত পরিমাণ
অর্থ চেকের বাহককে প্রদান করা হবে।
#সৌজন্যেঃ আইন-কানুন বাংলায়