সুনামগঞ্জ ভ্রমন সহায়িকা

(যারা অল্প সময়ে- স্বল্প বাজেটে ঘুরার কথা চিন্তা করেন তাদের জন্য বেস্ট। কমার্শিয়াল মানুষরাও স্বাচ্ছন্দ্যে মাত্র একটা Weekend এর ২-দিনে সেই ট্যুর দিতে পারবেন।)
স্পট সমূহ :
১) সোয়াম্প ফরেস্টের ওয়াচ টাওয়ার
২) ট্যাকের ঘাট
৩) নীলাদ্রি লেক
৪) লাকমাছড়া
৫) বাজাইছড়া ঝর্না
৬) বারিক্কা টিলা
৭) জাদুকাটা নদী
৮) শিমুল বাগান
৯) হাসন রাজার বাড়ি
[এখানে আমাদের ট্যুরের বিস্তারিত বর্ণনা দিচ্ছি, সাথে সম্ভাব্য অন্যসব ইনফো দেওয়ার চেষ্টা করবো। তার জন্য পোস্টটা একটু বড় হবে- তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।।]
.
.
আমরা বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় সায়েদাবাদ বাস কাউন্টার থেকে সুনামগঞ্জ-এর বাসে উঠি (ভাড়া ৫৫০টাকা- শ্যামলীতে)। অনেকে ট্রেনে যেতে বেশি পছন্দ করেন, কিন্তু ঢাকা-সুনামগঞ্জ এর কোন ডিরেক্ট রুট নাই। তাই সিলেট নেমে সেখান থেকে আবার সুনামগঞ্জ-এর বাসে উঠতে হবে। এক্ষেত্রে সময়ও বেশি লাগবে। তাই আমরা বাসকেই priority দেই।।
শুক্রবার ভোর ৬টার সুনামগঞ্জ বাস টার্মিনাল-এ পৌঁছে যাই। সেখানে সকালের নাস্তা শেষ করে রিটার্ন টিকিট কনফার্ম করে ফেলি। এরপর তাহিরপুর বাজারে যাবো বলে একটা লেগুনা ঠিক করি (ভাড়া ৬০০-৮০০টাকা)। মোটর সাইকেল- সিএনজি করেও যাওয়া যায়, সেজন্য আপনাকে সুরমা নদীর ব্রীজে নামতে হবে।।
৯ টার মধ্যে আমরা তাহিরপুর বাজারে পৌঁছে যাই। সেখানে প্রথমে নৌকা ঠিক করতে হবে। ২টা way আছে--
১) তাহিরপুর বাজার- ট্যাকেরঘাট- বারিক্কাটিলা- তাহিরপুর বাজার (ভাড়া ৪০০০-৫৫০০টাকা *সবচেয়ে বড় নৌকাগুলো)
২) তাহিরপুর বাজার- ট্যাকেরঘাট (ভাড়া ৩০০০-৪০০০ টাকা)
[সেখানে ছোট-মাঝারি রকমের নৌকাও পাওয়া যাবে। ভাড়াও তুলনামূলক ভাবে কম। আর বেশ কয়েকটা ঘাটও রয়েছে। তাই একটু ঘুরলেই কমে নৌকা পেয়ে যাবেন। রান্না মূলত মাঝিরাই করে। আবার মাঝিদের বাসাতেও করানো যায়। ঐভাবেই কথা বলে নিতে হবে। দরকার হলে একজন বাবুর্চিও নিতে পারেন। তবে মাঝিদের সাথে নিজেরা একটু হাত লাগালেই হয়ে যায়। নিজেরা রান্না করার যে মজা পাওয়া যায়- সেটা আলাদা করে কাউকে বলতে হবে না।]
আমরা বেশি ঘুরা + কম খরচের কথা চিন্তা করে অপশন-২ বেছে নেই।।
এরপর বাজার করার পালা, আমরা (দুপুরের+রাতের) ২ বেলা খাবারের জন্য বাজার করি। অনেকে পরের দিন সকালসহ ৩ বেলারও করে। বাজার শেষ করে নৌকা করেই স্থানীয় থানায় চলে যাই। সেখানে মাঝিসহ রেজিস্টার করে নেই আমরা সবাই। তখন প্রায় ১১:৩০টা বেজে যায়।।
বেলা ১২:৪৫ এর দিকে আমরা আমাদের প্রথম দর্শনীয় স্থান সোয়াম্প-ফরেস্টের ওয়াচ টাওয়ারে চলে আসি। সেখানে গিয়ে আর তর সহ্য করতে না পেরে জামা-কাপড় পরিবর্তন করে পানিতে নেমে যাই। ততক্ষণে মাঝিরা রান্না শুরু করে দেয়। প্রায় ঘণ্টাখানেক থেকে- সেখান থেকে আমরা নৌকায় শেষ স্পটে চলে যাই- ট্যাকেরঘাট। এখানেই রাতে থাকবো কারন থানা থেকে আমাদের এখানেই থাকার পরামর্শ দিয়েছিল।।
দুপুর ২:৩০ টা নাগাদ আমরা ট্যাকেরঘাট চলে আসি। সেখানে হিমাদ্রীলেক সহ আশেপাশের বেশ কয়েকটি টিলা দেখি। তারমধ্যে কয়লার খনিও ছিল- এখান থেকে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত খুব ভাল ভাবেই দেখা যাচ্ছিল। লেক থেকে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে, দিনের শেষ মিশনে নামি। নাম না জানা ২টা ঝর্ণা পার হয়ে শেষে লাকমাছড়াতে যাই ( এই ঝর্ণাটা পুরো বিছানাকান্দির মত)। লাকমাছড়া থেকে ফেরার পথেই স্থানীয় বাজার পরে, সেখান থেকে প্রয়োজনীয় জিনিষ-পত্র কিনে নৌকায় ফিরি। রাতের খাবারের পর আড্ডা দিতে দিতে নৌকায় আমরা রাত পার করি। বলা বাহুল্য আমরা পূর্ণিমা রাত চিন্তা করেই ট্যুর প্লান করি। আপনারাও বেপারটা মাথায় রাখতে পারেন।।
পরেরদিন (শনিবার) সকালে ঘুম থেকে উঠে আমরা নৌকা ছেড়ে দেই। এবার মোটরবাইক ঠিক করি বারিক্কাটিলা যাবো বলে (ভাড়া ১৫০-১৮০টাকা/ বাইক- প্রতি বাইকে ২জন করে বসতে পারবেন)। অনেকে ডাইরেক্ট সুনামগঞ্জ এর জন্যও বাইক ভাড়া করে- সেক্ষেত্রে ভাড়া ৩৫০-৪৫০টাকা/বাইক পরবে।।
বাইকে প্রথমেই বাজাইছড়া ঝর্ণা দেখতে পারবেন। এরপর সোজা বারিক্কাটিলায়। বাইক থেকে নামলেই টিলার উপর থেকেই জাদুর মায়াজালে আবৃত "জাদুকাটা নদী" দেখতে পারবেন। তবে নদীতে নামার আগে টিলার বাম পাশে মাত্র ২মিনিট হাটলেই ভাল একটা ভিউ পাবেন- চাইলে বেশ কিছুক্ষণ বসে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।।
টিলা থেকে নেমে আরো ডানদিকে রয়েছে শিমুলতলা বাগান। বাগানে যেতে হলে আপনাকে নদী পার হতে হবে। আমরা সময়ের অভাবে সেখানে যাই নি। তাই টিলার ঠিক নিচ থেকেই নৌকায় জাদুকাটা নদী পার হই (ভাড়া ৫টাকা/জন)। সেখানেই এক পসলা গোছল শেষ করে ১০মিনিট হেটে লাউরের গর বাজারে চলে যাই।।
বাজার থেকে সুনামগঞ্জ যাওয়ার জন্য সিএনজি-বাইক পাওয়া যাবে (সিএনজি ৪০০-৫০০টাকা, বাইক ২০০টাকা/বাইক)। এখানে রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ, তাই বাইক নিতেই পরামর্শ দিব।।
আমাদের সুনামগঞ্জ আসতে আসতে বেলা ২টা বেজে যায়। আমাদের মধ্যে এক গ্রুপ দুপুর ২:৩০টায় বাসের টিকিট কেটেছিল- তারা চলে যায়। আমরা যারা ছিলাম তারা এরপর দুপুরের লাঞ্চ করে সুনামগঞ্জ শহর দেখতে বেড়োই।
হাসন রাজার বাড়ি, সুনামগঞ্জ এর ঐতিহ্যবাহী মিউজিয়াম, হালুয়াঘাট প্রভৃতি দেখে রাত অবধি সুরমা ব্রীজে আড্ডা দেই। শেষে ব্রীজ থেকে পুরানো বাসস্টপে ইজিবাইক (ভাড়া ৫টাকা/জন) করে এসে ডিনার করে রাত ১০টার ঢাকার বাসে রওনা দেই।।
** বাজেট:
১১জন +৪জন মাঝির রান্নায় বাজার করতে আমাদের ২০০০টাকা লেগেছিল (মেন্যু - আলুভর্তা+মুরগি+ডাল+ভাত=লাঞ্চ, ডিম+আলুভর্তা +খিচুরি=ডিনার)। সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি আর one time used প্লেট নিতে ভুলবেন না।
আমাদের commonly ২০০০টাকা/জন + খুচরা ২০০টাকা সর্বমোট ২২০০টাকা করে লেগেছিল (smoker দের জন্য একটু বেশি পরবে)।।
** সর্তকতা:
আসার আগে সিলেটের বৃষ্টির- বন্যার কথা চিন্তা করে অনেকে একটু ভীত ছিল। কিন্তু সেই রকম কোন বিপদ তো দূরে থাক, তার ছায়াও মাড়াতে হয় নি। তবে ছাতা, রেইনকোর্ট, পলিথিন, বিছানার চাদর, power-bank (যদি থাকে) নিতে ভুলবেন না।।
** প্রয়োজনীয় ফোন নম্বর:
নৌকার মাঝি- জুয়েল (01779647909)
বাইকের মামা- আবুল হোসেন (01724101532)
থানার নং- ডিউটি অফিসার (01992051004)
** আচরণ:
সুনামগঞ্জ-এর মানুষের আচরণ- এক কথায় অসাধারণ। অত্যন্ত অতিথিপরায়ণ এবং আন্তরিক। এমন কি মাঝিদের দেখলেই বুঝা যাবে এরা কতটা সহজ-সরল। একটা ছোট উদাহরণ দিলেই হয়ত বেপারটা বুঝবেন- আমাদের লাউরের গর বাজারে সিএনজি, নিজ থেকে ঠিক করে দেন গ্রামের এক মুরুব্বি। অন্য একজন তো বাসায় বসিয়ে আস্ত একটা কাঁঠালই গাছ থেকে পেড়ে বসিয়ে খাওয়ালেন। এছাড়া সব স্থানেই গ্রামের গোন্যমান্য ব্যাক্তিরা নিজ থেকে এসে কুশল জানতে চেয়ে সাহায্য করেছেন। এমন কি আমাদের হয়ে মাঝি-বাইকারদের সাথে দাম নিয়ে কথা বলেছেন যাতে আমরা লোকাল ভাড়ায়ই যেতে পারি।।






Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.